কিম কার্দাশিয়ানের মাথায় বন্দুক ঠেকিয়েছিল ‘গ্র্যান্ডপা রবার্স’—কিন্তু জানত না তিনি কে

Date:

Share post:

কিপিং আপ উইথ দ্য কার্দাশিয়ানস-এর এক পর্বে কিম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ডাকাতির রাতে তিনি নিজের জীবনের জন্য ভয় পেয়েছিলেন। পরে জানান, এ ঘটনা তাকে ‘কম ভোগবাদী’ করে তুলেছে।

কিপিং আপ উইথ দ্য কার্দাশিয়ানস-এর এক পর্বে কিম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ডাকাতির রাতে তিনি নিজের জীবনের জন্য ভয় পেয়েছিলেন। পরে জানান, এ ঘটনা তাকে ‘কম ভোগবাদী’ করে তুলেছে।
ডাকাতির পর সকালে ইউনিস আব্বাস বাড়ি ফিরে ঘুমাতে যান।

জেগে উঠে দেখেন, তার স্ত্রী টেলিভিশনের সামনে বসে আছেন। টেলিভিশনে সেদিনের বড় শিরোনাম—আমেরিকান রিয়েলিটি টিভি তারকা কিম কার্দাশিয়ান প্যারিসের একটি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্টে অস্ত্রের মুখে ডাকাতির শিকার হয়েছেন।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, এসময় কার্দাশিয়ানের প্রায় ১০ মিলিয়ন ডলারের (৭.৫ মিলিয়ন পাউন্ড) গহনা লুট হয়। এর মধ্যে তার সাবেক স্বামী র‌্যাপার ক্যানি ওয়েস্টের দেওয়া ৪ মিলিয়ন ডলারের বাগদানের আংটিও ছিল।

টেলিভিশনের দিকে তাকিয়ে আব্বাসের স্ত্রী বিড়বিড় করে বলতে থাকেন, “সব মনে হচ্ছে তোমাদের কাজ।”

তিনি একদম ঠিকই অনুমান করেছিলেন। ৬২ বছর বয়সী আব্বাস জীবনের অধিকাংশ সময় অপরাধ জগতের সঙ্গেই যুক্ত ছিলেন। তিনি ছোটখাটো অপরাধ থেকে শুরু করে ব্যাংক ডাকাতি পর্যন্ত করেছেন।

পরে নিজের স্মৃতিকথায় আব্বাস লেখেন, এসব কাজ থেকে অবসর নেওয়ার আগে কিম কার্দাশিয়ানের এই ডাকাতিই ছিল তার শেষ ‘অপারেশন’।

তবে একের পর এক ভুলের কারণে এই ডাকাতি শুরু থেকেই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। ঘটনার তিন মাস পর, ২০১৭ সালের শুরুতে আব্বাসসহ তার কয়েকজন সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হয়। আর এ ঘটনার ৯ বছর পর এর বিচার কার্যক্রম শুরু হচ্ছে।

তাদের ১০ জনকে প্যারিসের আদালতে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। তাদের মধ্যে পাঁচজনের বিরুদ্ধে ডাকাতির অভিযোগ এবং ছয়জনের বিরুদ্ধে অপরাধে সহায়তার অভিযোগ আনা হয়েছে।

অভিযুক্তদেরর বেশিরভাগই ১৯৫০-এর দশকে জন্মগ্রহণ করেছেন। ফরাসি গণমাধ্যমগুলো তাদের ‘গ্র্যান্ডপা রবার্স’ নাম দিয়েছে।

আব্বাস এবং ৬৮ বছর বয়সী ওমর আইত খেদাছে অপরাধের কথা স্বীকার করেছেন। তবে অন্যরা তা অস্বীকার করেছেন।

অভিযুক্তদের মধ্যে একজন মারা গেছেন এবং ৮১ বছর বয়সী আরেকজন ডিমনেশিয়ায় আক্রান্ত হওয়ায় বিচারের বাইরে আছেন।

সেদিন কী ঘটেছিল?

২০১৬ সালের ২ ও ৩ অক্টোবর মধ্যরাতে, আব্বাস ও তার চার সহযোগী প্যারিসের ম্যাডেলিন এলাকার হোটেল ডি পোর্টালিসে কার্দাশিয়ানের স্যুট ঘিরে ফেলেন। এটি অপেরা ও প্লেস ভেনডোমের কাছাকাছি ছিল।

স্থানীয় সময় রাত তিনটার দিকে তারা পুলিশের পোশাক পরে, অস্ত্র হাতে হোটেলের ভেতরে ঢুকে পড়েন।

তারা আলজেরিয়ান পিএইচডি শিক্ষার্থী আবদেররহমান ওউতিকিকে ভয় দেখিয়ে হাতকড়া পরিয়ে দেয়। তিনি তখন হোটেলের নাইট রিসেপশনিস্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। পরে তাকে জোর করে কার্দাশিয়ানের কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়।

ওই সময় ক্লান্ত কার্দাশিয়ান বিছানায় বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। হঠাৎ সিঁড়িতে পায়ের শব্দ শুনে তিনি আতঙ্কিত হয়ে বোন কোর্টনি ও স্টাইলিস্ট স্টেফানির নাম ধরে ডাকেন। কিন্তু কেউ সাড়া না দেওয়ায় তার ভয় আরও বেড়ে যায়।

পরবর্তী সময়ে ডেভিড লেটারম্যানকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কিম বলেন, ‘আমি বুঝতে পারছিলাম, কেউ আমাকে লক্ষ্য করেই এসেছে।’

কিম সঙ্গে সঙ্গে জরুরি সেবা ৯১১ নাম্বারে ফোন করেন। কিন্তু নাম্বারটি শুধু যুক্তরাষ্ট্রের জন্য কার্যকর। কিন্তু তিনি তখন ফ্রান্সে অবস্থান করছেন। এরপর তিনি তার তৎকালীন নিরাপত্তা রক্ষী প্যাসকেল ডুভিয়েরকে কল করেন কিন্তু তার ওই নিরাপত্তা রক্ষী তখন তার বোনের সঙ্গে ক্লাবে ছিলেন। এর মধ্যেই অস্ত্রধারীরা ঘরে ঢুকে পড়ে এবং কিমকে বিছানায় ফেলে চিৎকার করে বলেতে থাকে, ‘আংটি! আংটি!’

ভয় ও বিভ্রান্তিতে পড়ে প্রথমে কিছুই বুঝে উঠতে পারেননি কিম।

ভাষাগত সমস্যার কারণে, ওউতিকিকেই দোভাষীর ভূমিকা পালন করতে হয়।

ডাকাতরা তার আংটি, অন্যান্য গহনা ও নগদ ১,০০০ ইউরো নিয়ে নেয়। অপর এক ডাকাত কিমকে ধরে টানতে থাকে।

পরে কিম জানান, তিনি ভেবেছিলেন, তাকে যৌন নিপীড়নের চেষ্টা করা হচ্ছে। কারণ, তিনি যে পোশাক পরেছিলেন তার নিচে আর কিছু ছিল না। কান্নাজড়িত কণ্ঠে এ অভিজ্ঞতার কথা জানান তিনি।

তবে শেষ পর্যন্ত, সসিসনেজ পদ্ধতিতে তাকে জিপ টাই ও ডাকটেপ দিয়ে বেঁধে বাথরুমে ফেলে রাখা হয়।

এরপর ডাকাতরা বাইক ও পায়ে হেঁটে পালিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর নিজেকে মুক্ত করে ফেলেন কিম এবং তার নিরাপত্তারক্ষীও এসে পৌঁছায়।

ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে ভোররাতে তিনি ফরাসি পুলিশের কাছে বয়ান দেন এবং দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র ফিরে যান।

পরদিন সকালে টিভি স্ক্রিনে দৃশ্য দেখে আব্বাস বুঝতে পারেন, তারা ঠিক কাকে টার্গেট করেছিলেন।

এলএ-ভিত্তিক বিনোদন সাংবাদিক কেজে ম্যাথিউস বলেন, ‘কিম কার্দাশিয়ানের ছিনতাইয়ের ঘটনা তখন ব্রেকিং নিউজ হয়ে যায়।’

ডাকাতি ব্যর্থ হওয়ার কারণ

ম্যাথিউস বলেন, ‘কার্দাশিয়ানের খ্যাতি এবং তার পরিবারের উত্থান সবাইকে মুগ্ধ করেছিল। তাই ছিনতাইয়ের ঘটনায় আমরা হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম। ভাবছিলাম, চোরেরা এত কাছে কীভাবে পৌঁছাল?’

তবে নিরাপত্তা ঘাটতি থাকলেও, চোরদের দিক থেকেও গুরুতর ভুল হয়েছিল।

ক্রাইম রিপোর্টার প্যাট্রিসিয়া টুরানচেউ বলেন, ‘তারা পুলিশের প্রযুক্তিগত উন্নতির বিষয়টি গুরুত্ব দেয়নি, যা এখন অতি সূক্ষ্ম ডিএনএ চিহ্নও শনাক্ত করতে পারে।’

তিনি আরও বলেন, ‘তারা ভেবেছিল, পুলিশের পোশাক পরলে কেউ সন্দেহ করবে না।’

কিন্তু প্যারিস তখন ২০১৫ সালের সন্ত্রাসী হামলার কারণে উচ্চ নিরাপত্তা সতর্কতা জারি ছিল। শহরজুড়ে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো ছিল। ফলে পুলিশ সহজেই চোরদের গতিবিধি ট্র্যাক করতে সক্ষম হয়।

চোরদের পরিকল্পনাও ছিল এলোমেলো। ঘটনাস্থল থেকে পালানোর সময় আব্বাস গহনার একটি ব্যাগ ফেলে যান।

একজন পথচারী পরদিন একটি হীরার নেকলেস কুড়িয়ে পান এবং সারাদিন সেটি অফিসে রেখে দেন।

পুলিশ পরে আব্বাসসহ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে এবং জানায়, তারা অনেক আগে থেকেই সন্দেহভাজনদের ওপর নজর রাখছিল। ঘটনাস্থলে পাওয়া ডিএনএ’র সঙ্গে মিলে যায় ওমর আইত খেদাছের ডিএনএ, যিনি ‘ওমর দ্য ওল্ড’ নামে পরিচিত।

ফরাসি সংবাদমাধ্যম একটি ছবি প্রকাশ করে, যেখানে দেখা যায়—গ্রেপ্তারের ঠিক আগে, শীতের সকালে প্যারিসের এক ক্যাফেতে সন্দেহভাজন কয়েকজন আড্ডা দিচ্ছেন।

বিবিসি হাতে পাওয়া আদালতের নথি অনুযায়ী, খেদাছে ও আব্বাস দাবি করেছেন—কার্দাশিয়ান নিজেই অনলাইনে তার চলাফেরা প্রকাশ করতেন, সেখান থেকেই তথ্য পেয়েছিলেন তারা।

তবে প্রশ্ন থেকে যায় ডাকাত দলটি নিশ্চিত হলো কীভাবে, সেদিন রাতে কিম একা থাকবেন?

আদালতের নথি ইঙ্গিত করে, পুলিশ মনে করে গ্যারি মাদার ডাকাতি করতে সহায়তা করেছেন। কারণ তার ভাই মাইকেল অনেক বছর ধরে কার্দাশিয়ানদের পরিবহন এবং ট্যাক্সি সরবরাহ করে আসছিল।

মাদার ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে গ্রেপ্তার হন। তার আইনজীবী আর্থার ভারকেন বিবিসিকে বলেন, ‘মামলাটি অনুমান, তত্ত্ব ও ধারণার ওপর দাঁড়িয়ে—কিন্তু তার জড়িত থাকার প্রমাণ নেই।’

তিনি জানান, মাদার ভাইরা ফ্যাশন সপ্তাহের সময় কার্দাশিয়ানদের বিষয়ে টেক্সট আদান-প্রদান করেছিলেন কেবল আগ্রহবশত। ডাকাতির সময় গ্যারি ঘুমাচ্ছিলেন।

গ্যারির ভাই মাইকেল অবশ্য অভিযুক্ত নন।

তিনি বলেন, ‘পাঁচজন ডাকাত যদি কাজ করে, তাহলে তাদের মধ্যে একজন নিশ্চয়ই হোটেল পর্যবেক্ষণে ছিল।’

তিনি আরও বলেন, মাদারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল কেবল ‘ফরাসি বিচারব্যবস্থা কাজ করছে দেখানোর জন্য।’

এদিকে পুলিশের ফোন ট্র্যাকিং অনুসারে, ডাকাতির পর ওমর দ্য ওল্ড বেলজিয়ামের অ্যান্টওয়ার্পে যান, যেখানে বিশ্বের ৫০ শতাংশ পালিশ করা ও ৮০ শতাংশ কাঁচা হীরা বিক্রি হয়।

ধারণা করা হচ্ছে, বেশিরভাগ গহনা গলিয়ে বা ভেঙে বিক্রি করা হয়েছে। আব্বাস পেয়েছিলেন মাত্র ৭৫,০০০ ইউরো (৬৪,০০০ পাউন্ড); অন্যরা পেয়েছিলেন আরও কম।

তারা কিমের বিখ্যাত বাগদানের আংটি বিক্রি করতে সাহস পাননি। কারণ সেটি খুব সহজে শনাক্তযোগ্য ছিল। সেটি আর কখনো উদ্ধার হয়নি।

কার্দাশিয়ান নিঃসন্দেহে এই ঘটনার পরে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েন। এরপর দীর্ঘ সময় সোশ্যাল মিডিয়া থেকে দূরে ছিলেন।

কিপিং আপ উইথ দ্য কার্দাশিয়ানস-এর এক পর্বে কিম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ডাকাতির রাতে তিনি নিজের জীবনের জন্য ভয় পেয়েছিলেন। পরে জানান, এ ঘটনা তাকে ‘কম ভোগবাদী’ করে তুলেছে।

তার বোন খলো এলেন ডিজেনারেসকে বলেন, নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় তারা তাদের সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে পরিবর্তন এনেছেন।

কেজে ম্যাথিউস বলেন, ‘সবচেয়ে বড় পরিবর্তন এসেছিল তার নিরাপত্তা ব্যবস্থায়।’


Discover more from TV TODAY LIVE

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

spot_imgspot_img

Related articles

Discover more from TV TODAY LIVE

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading