আবু উলফাত সাঈদ-
১। লক্ষ জীবনের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব শুধু নিজের স্বার্থের কারণে ভারতের হাতে তুলে দিয়ে এদেশকে “ভারতের কলোনী” বানিয়ে ছেড়েছেন; অর্জন করেছেন “এ শতাব্দীর ঘষিটী বেগম” খেতাব। একই সাথে, নিজের দেশ, সংস্কৃতি এবং ধর্মকে বিসর্জন দিয়ে তিনি ভারতের দাসত্ব ও পদলেহনের সংস্কৃতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছেন।
২। মুক্তিযুদ্ধকে নতুন বয়ানে বানিয়ে ফেলেছেন একটা ইন্ডাস্ট্রি, পৈতৃক সম্পত্তি এবং “জোন অফ কোরাপশান”। চরম বৈষম্যের কৌটা ব্যবস্থা, দলীয় কর্মীদের প্রায় এক লক্ষ ভূয়া মুক্তিযুদ্ধ সনদ প্রদান, এবং বিসিএস পরীক্ষায় প্রায় দেড় দশক ধরে আবেদ আলীদেরকে দিয়ে প্রশ্নফাঁসের লুক্রেটিভ ব্যবসা সম্প্রসারণ করে এদেশের অধিকাংশ মানুষের (বিশেষ করে চাকরি বঞ্চিত মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের) বুকে যে বঞ্চনার লেলিহান দাবালন তিনি জ্বালিয়ে দিয়েছেন, তা হয়তো আর নেভানো সম্ভব নয়।
৩। তিনি বাংলাদেশের “রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও ঘৃণাতন্ত্রের” জননী। তার প্রবর্তিত ঘৃণার লেলিহান শিখায় আজ জ্বলছে সারাটা দেশঃ কখনো লগি-বৈঠার তান্ডবে; কখনো চাপাতির আঘাতে; আবার কখনো পুলিশ, র্যাব কিংবা বিজিবির নির্বিচার নৃশংস গুলিতে।
৪। তারই ছত্রছায়ায় বাংলাদেশে ছড়ানো হয়েছে ভয়ংকর ইসলাম-ভীতি (Islamophobia), মুসলমানদের বানানো হয়েছে জংগি, পোড়ানো হয়েছে পবিত্র কোরান, হত্যা করা হয়েছে শত শত আলেমদেরকে, ফাঁসিতে ঝোলানো হয়েছে এই বঙ্গের শ্রেষ্ঠ সন্তানদেরকে। রিমান্ডে নিয়ে টর্চার, বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড, ক্রসফায়ার এবং গুমসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের খতিয়ানগুলো হাজার বছরের ইতিহাস হয়ে থাকবে। বিশ্বের প্রথম “লেডি হিটলার” হিসাবে তিনি অমর হয়ে থাকবেন দুনিয়ায় ইতিহাসে।
৫। তার হিংসা ও ঘৃণাতন্ত্রের ছোবলে পুরা দেশ একসময় ছিলো আস্তিক-নাস্তিক বলয়ে বিভক্ত এবং চরম ফেতনাতে নিমজ্জিত। আজ বিভক্ত “মুক্তিযোদ্ধা” আর “রাজাকারের বাচ্চা”য়! চেতনার নামে স্বাধীনতার পক্ষ-বিপক্ষ দ্বন্দ্ব তৈরি করে পুরো দেশকে নিশ্চিত সংঘাত এবং গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিয়েছেন। দেশের পুরো রাজনীতিকে ১৯৭১ সালের লৌহ-পিঞ্জরে আবদ্ধ করে; অন্যান্য সকল দল, মত এবং পথকে ক্রিমিনালাইজ করে, গনতন্ত্রকে কবর দিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার সকল পথ বন্ধ করে রেখেছেন। প্রতিষ্ঠা করেছেন এশিয়া মহাদেশের প্রথম লুটতান্ত্রিক ফ্যাসিবাদ।
৬। দেশের মানুষের শেষ আশ্রয় বিচার বিভাগকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে তিনি আওয়ামীলীগের দলীয় কার্যালয়ে পরিণত করেছেন। “হাইকোর্টের রায় হাইকোর্ট দেয়না, আসে বঙ্গভবন থেকে” এমনই স্বীকারোক্তি মিলেছে তারই পোষা এক প্রধান বিচারপতি থেকে।
৭। তার দলীয় কর্মী বিশেষ করে ছাত্রলীগ এবং যুবলীগকে বানিয়েছেন এ যুগের ভয়ংকর এবং বীভৎস সন্ত্রাসী এবং “কিলার মেশিন”। ক্যাম্পাসে টর্চার সেল গঠন করে ভিন্নমতের ছাত্র নির্যাতন, লগি-বইঠা দিয়ে হত্যা করে লাশের উপর নৃত্য করা, হত্যা করে লাশ কেটে টুকরো টুকরো করা — এ ধরনের হাজারো লোমহর্ষক কাহিনি আছে এই সন্ত্রাসী বাহিনীর। শেখ হাসিনা এদের সবাইকে দিয়েছেন লিগ্যাল ইমিউনিটি। এমনকি ফাঁসির আসামী হয়েও এরা পেয়েছেন প্রেসিডেন্টের বিশেষ ক্ষমা, লোভনীয় চাকরি এবং প্রমোশন।
৮। তিনিই বাংলাদেশের প্রথম “গণহত্যার জননী”। অন্তত ছয়টি গণহত্যা সংগঠিত হয়েছে তারই শাসনামলে। ২৮শে অক্টোবরের লগি-বইঠার তান্ডব, শাপলা চত্তর, পিলখানা, সাঈদীর রায়-পরবর্তী ম্যাসাকার, সাতক্ষীরা ম্যাসাকার, এবং বর্তমানের কৌটা-বিরোধী নিরীহ ছাত্র-ছাত্রীদের উপর সীমাহীন নির্যাতন এবং নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞ হাজার বছর ধরে গণহত্যার সাক্ষী হয়ে থাকবে। এই কিলিং মিশনে দেশীয় কিলারদের পাশাপাশি তিনি ভাড়া করে এনেছেন র’এর প্রফেশনাল কিলারদেরকে।
৯। একচ্ছত্র ক্ষমতা এবং একদলীয় শাসন কায়েম করতে গিয়ে তিনি দেশের প্রায় প্রতিটা প্রতিষ্ঠান ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এনেছেন। দেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীকে (বিডিআর এবং আর্মী) ধ্বংস, দুর্বল, বিতর্কিত, এবং দলীয়করণে তিনি ইতিহাসে কুখ্যাত হয়ে থাকবেন। সংস্কারের নামে শিক্ষাব্যবস্থার বারোটা বাজিয়েছেন, নির্বাচন কমিশনকে পকেটে পুরেছেন, আর জাতীয় সংসদকে বানিয়েছেন গানের আসর আর শেখ পরিবারের তৈলমর্দনের কারখানা।
১০। রিজার্ভ চুরি, ব্যাংক লুট, শেয়ার বাজার কেলেংকারী, বিদেশে অর্থ পাচারসহ সীমাহীন দুর্নীতি এবং অব্যবস্থাপনার যে রেকর্ড শেখ হাসিনার আমলে হয়েছে, তার ধারের কাছে দুনিয়ার অন্য কেউ আসতে পারেবে কিনা সন্দেহ! দুর্নীতি আর লুটতন্ত্র এতোটাই গভীর যে শেখ হাসিনার চতূর্থ শ্রেণির পিয়ন পর্যন্ত কামিয়ে ফেলেছেন ৪০০ কোটি টাকার সম্পদ! বেনজির, আজিজ, মতিয়ার, এবং এস আলমসহ শত শত মহা লুটেরা তৈরি করে একদিকে কায়েম করেছেন মাস্তানতন্ত্র এবং মগের মুল্লুক, অন্যদিকে পুরো দেশটাকে পরিণত করেছেন শ্মশানে।
বাংলাদেশের যেসব সর্বনাশ শেখ হাসিনা করলেন, তার মাশুল বাংলাদেশকে অন্ততঃ একশ বছর ধরে দিতে হবে।