জাতিসংঘের প্রস্তাবে নীতিগত সম্মতি, কিন্তু বিশ্লেষকরা বলছেন নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে
নিজস্ব প্রতিবেদক | জাতিসংঘের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ রাখাইনে ‘মানবিক করিডোর’ প্রতিষ্ঠার বিষয়ে নীতিগতভাবে সম্মতি দিয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। তবে এর সঙ্গে রয়েছে কয়েকটি শর্ত এবং নিরাপত্তাজনিত আশঙ্কা। রবিবার এক ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “নীতিগতভাবে আমরা এতে সম্মত, কারণ এটি একটি মানবিক সহায়তার পথ। তবে এতে আমাদের কিছু শর্তাবলী রয়েছে, যেগুলো পূরণ হলে আমরা জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে সহযোগিতা করব।”
বাংলাদেশের তিনটি প্রধান শর্ত
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, বাংলাদেশ নিম্নোক্ত তিনটি শর্তে করিডোরে সম্মতি দিয়েছে:
সহায়ক পরিবেশ: যেসব এলাকায় সহায়তা পৌঁছাবে, সেখানে যুদ্ধ বা সংঘর্ষ চলবে না।অবিচারহীন সহায়তা: সহায়তা রোহিঙ্গা ও আরাকানিজসহ সব বেসামরিক মানুষের জন্য হতে হবে। শর্তহীন সহায়তা: সহায়তা পেতে কাউকে কোনো রাজনৈতিক বা প্রাতিষ্ঠানিক শর্ত মানতে হবে না। তবে করিডোরটি কোন সীমান্ত দিয়ে বাস্তবায়ন হবে, তা এখনও নিশ্চিত নয়। ঘুমধুম সীমান্ত ব্যবহার হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
নিরাপত্তা ঝুঁকির আশঙ্কা
বিশ্লেষকদের মতে, রাখাইন অঞ্চলে মানবিক করিডোর বাস্তবায়নে নিরাপত্তার বড় ঝুঁকি রয়ে গেছে। কারণ, রাখাইনের ৮০ শতাংশ এলাকা বর্তমানে একটি সশস্ত্র গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে, যারা রোহিঙ্গাদের সঙ্গেও সংঘর্ষে লিপ্ত বলে অভিযোগ আছে।
সাবেক কূটনৈতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, জাতিসংঘের সহায়তা রাখাইনের সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছাবে কিনা, নাকি সশস্ত্র গোষ্ঠীর দখলে যাবে—এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার কোনো উপায় নেই।
রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বেড়েছে
বর্তমানে বাংলাদেশে ১৩ লাখের বেশি রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। শুধু গত কয়েক মাসেই নতুন করে ১ লাখ ১৩ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা প্রবেশ করেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, রাখাইনে চলমান সংকট আরও বাড়লে রোহিঙ্গা ছাড়াও অন্যান্য গোষ্ঠীর অনুপ্রবেশ ঘটতে পারে।
মানবিক করিডোরের জন্য সহমত জরুরি
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করিডোর প্রতিষ্ঠার আগে বিবাদমান পক্ষগুলোর সম্মতি, যৌথ পর্যবেক্ষণ, এবং সুনির্দিষ্ট কাঠামো জরুরি। নয়তো এটি বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে সংঘাতের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
একজন সাবেক সামরিক কর্মকর্তা বলেন, “জাতিসংঘের কোনো পর্যবেক্ষণ টিম রাখাইনে এখন নেই। সেখানে লজিস্টিক সাপোর্ট ছাড়াই এই করিডোর বাস্তবায়ন হলে মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর প্রতিক্রিয়া কী হবে, তা বাংলাদেশকে বিবেচনায় নিতে হবে।”